খুলনা, বাংলাদেশ | ২ পৌষ, ১৪৩১ | ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, ফিরছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা : হাইকোর্ট
  জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় ট্রাইব্যুনালে হাজির সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান ও দীপু মনিসহ ১২ জন

খুলনা মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও দেশের কোনো কোনো জায়গা তখনো হানাদারমুক্ত হয়নি। খুলনা মুক্ত হয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর, শুক্রবার। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের পরদিন দুপুরে খুলনার পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ১৬ ডিসেম্বর রাতেও খুলনা কেঁপেছে ট্যাংক, কামান, বোমা ও গোলাবারুদের আঘাতে।

এ সময় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ হয় খুলনার শিরোমণি, গল্লামারী রেডিও স্টেশন (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা), লায়ন্স স্কুল, বয়রার পোস্টমাস্টার জেনারেলের কলোনি এলাকা, ৭ নম্বর জেটি এলাকা, নূরনগর ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভবন, গোয়ালপাড়া, গোয়ালখালি, দৌলতপুর, টুটপাড়া, নিউফায়ার ব্রিগেড স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায়।

১৬ ডিসেম্বর শেষ রাতে খুলনায় প্রবেশ পথে গল্লামারীতে যে যুদ্ধ হয় তাতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে শিপইয়ার্ডের কাছে রূপসা নদীতে বটিয়াঘাটা ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি লঞ্চ এসে পৌঁছে। কিন্তু শিপইয়ার্ডের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাক সৈন্যরা লঞ্চটির ওপর আক্রমণ চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনীও লঞ্চ থেকে নেমে শিপইয়ার্ডের ওপারের ধান ক্ষেতে অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলিবিনিময়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত ও ১৬ জন আহত হন। এই যুদ্ধে পাক বাহিনীরও কয়েকজন সদস্য নিহত ও আহত হয়। অবশেষে সব বাধা অতিক্রম করে ১৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেন।

খুলনা সার্কিট হাউস দখল করার পর মেজর জয়নুল আবেদীন ও রহমত উল্লাহ্ দাদু যৌথভাবে সার্কিট হাউসে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী, আবুল কালাম আজাদ, রেজাউল করিম, গাজী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ হাদিস পার্কে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

মিত্রবাহিনী খুলনা শহরে প্রবেশ করার ৮ ঘণ্টা আগেই হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল, ক্যাপ্টেন হুদা, ডা. শাজাহান মোস্তফাসহ কয়েকজন খালিশপুরে মিত্রবাহিনীর সদর দফতরে গিয়ে জেনারেল দলবীর সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর পাক বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হায়াত আলী খান খবর দেন যে তিনি তার বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে সম্মত হয়েছেন। আত্মসমর্পণের যাবতীয় বিষয় আলাপ-আলোচনা শেষে ব্রিগেডিয়ার হায়াত তার ব্রিগেড মেজর ফিরোজকে বলেন, সব সৈন্যকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও- যুদ্ধ শেষ। এরপর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের দফতর থেকে ব্রিগেডিয়ার হায়াত খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানের দিকে রওনা হন।

পাক বাহিনীর পরাজিত বিধ্বস্ত সৈন্যরাও সার্কিট হাউস ময়দানের দিকে রওনা হয়। রাস্তায় তখন আবাল-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষের ঢল নেমেছে। সবাই ছুটছেন খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানের দিকে। ১৭ ডিসেম্বর সার্কিট হাউস ময়দানে পাক বাহিনী আত্মসমর্পণের পর উল্লাসে আর আনন্দে ফেটে পড়ে মুক্তিকামী জনতা। খুলনার মুক্ত বাতাসে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয় শহরবাসী।

খুলনা শহর মুক্ত হওয়ায় চারিদিক থেকে মুক্তিপাগল জনতা শ্লোগান দিতে থাকে জয় বাংলা। খুলনা নগরীর মুক্ত বাতাসে স্বাধীনতার পতাকা উড়তে শুরু করে। লাখো শহীদের রক্তে ভেজা এ পতাকা আজও পতপত করে উড়ছে খুলনার আকাশে-বাতাসে।

খুলনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার খুলনায় বিভিন্ন সংগঠন আলোচনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!